- ভাইয়া, আমিও বিদেশে পড়তে যেতে চাই। কিভাবে কি করবো? প্লিজ বলেন!
- ভাইয়া, আমি SSC এবং HSC তে GPA 5 পেয়েছি, আমি কি ফুল স্কলারশিপ পাবো?
- ভাইয়া, আমেরিকা তে পড়তে কি অনেক অনেক টাকা লাগে? আমার তো তত টাকা নাই, আমি কিভাবে স্কলারশিপ পেতে পারি?
এমন আরো শত শত প্রশ্ন আমি আমার মেসেঞ্জার ইনবক্সে পেয়ে থাকি। তোমাদের সকলের উদ্দেশ্যে তাই আমি আমার ব্যাক্তিগত জার্নি টা ছোট করে শেয়ার করবো আর কিছু ভুল ধারনা এবং বাস্তবতা সম্পর্কে জানাবো। আমি মোহতাসিম মনোয়ার, পড়ালেখা করছি ফ্রাঙ্কলিন অ্যান্ড মার্শাল কলেজে (Class of '28), কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে।
- ০) "কলেজ?" আপনি কি ইউনিভার্সিটি তে পড়েন না?
- হাহা। এমন প্রশ্ন আমিও আমার সিনিয়র কে করেছি। আসলে আমেরিকাতে বেশ অনেক গুলো liberal arts college আছে। এদিকে শুধুমাত্র ব্যাচেলর ডিগ্রীর উপর পড়ালেখা হয়, এর পরবর্তী ধাপ গুলো এভেইলেবল না। তাই, undergrad students দের পিছনে বেশি টাকা ইনভেস্ট করা যায় এবং এইসব জায়গায় ক্লাস রেশিও অনেক কম। তাই প্রফেসর এর সাথে ভালো কমিউনিকেশন করা যায় এবং ছোট একটা কমিউনিটি তে অ্যাক্টিভলি কন্ট্রিবিউট করা যায়। তাই এগুলোকে "কলেজ" বলেই সম্মোধন করা হয়।
- ১) আমেরিকা তে স্কলারশিপ নিয়ে পড়া কি আদৌ সম্ভব?
- অবশ্যই সম্ভব। তবে এর জন্যে প্রয়োজন এক্সট্রা অর্ডিনারি হওয়া। ভেবে দেখো, আমেরিকার একটা টপ ইউনিভার্সিটি তে পড়তে গেলে কোটি টাকা খরচ হয়। একটা ইউনিভার্সিটি কেনো তোমার পিছনে কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করবে? অবশ্যই তোমার মধ্যে এমন কিছু থাকতে হবে যা তোমাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করবে। "অন্য সবাই" বলতে এদিকে কম্পিটিশন বুঝাচ্ছে পৃথিবীর সেরা সেরা মানুষদের মাঝে। যদি তুমি মনে করো তুমি "সেরা" তাহলে অ্যাপ্লাই করতে ভয় কিসের! এক্সট্রা অর্ডিনারি বলতে কি বুঝাচ্ছি? এমন সব মানুষ যারা পড়ালেখার পাশাপাশি সমাজের মানুষদের জন্যে কিছু একটা ইম্প্যাক্টফুল কাজ করেছে, বা অবদান রেখেছে, কিংবা এমন কেউ যে সমাজের কোনো একটা সমস্যার সমাধান করেছে, এমন কেউ যে হয়তো কোনো অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ কে রিপ্রেজেন্ট করেছে কিংবা নেশনাল লেভেল কম্পিটিশনে ভালো করেছে অথবা এমন কেউ যে একটা রিসার্চ পেপার পাবলিশ করেছে ইত্যাদি!
- ২) এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস করলেই কি আমি ফুল স্কলারশিপ পেয়ে যাবো?
"না।" আমেরিকার অ্যাডমিশন প্রসেস টা হলো হোলিস্টিক। অর্থাৎ তোমার অ্যাপ্লিকেশন এর প্রত্যেকটা অংশ প্রভাব ফেলবে তোমার অ্যাডমিশন এ। অর্থাৎ, তোমাকে তোমার পড়ালেখা তেও (৯-১২ এর ট্রান্সক্রিপ্ট) ভালো রেজাল্ট করতে হবে। হয়তো ভাবছো যে, এটা কিভাবে সম্ভব! মানে, কলেজের শুরুর দিকের পরীক্ষা গুলোতে তো সাধারণত তত ভালো রেজাল্ট আসে না। চিন্তার কারণ নাই। অ্যাডমিশন অফিসার রা এই বিষয়টা জানে। এরপরেও অ্যাপ্লিকেশন এর এডিশনাল সেকশন এ বুঝায় বলতে পারবা। তবে এদিকে আরেকটা বিষয় আছে। বাংলা মিডিয়াম/আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তত একটা গুরুত্ব দেয় না আমেরিকার অ্যাডমিশন অফিসার রা। তুমি তোমার স্কুল কলেজের ফার্স্ট বয় বা ফার্স্ট গার্ল হলেও তোমার অ্যাকাডেমিক যোগ্যতাকে আরো বেশি স্ট্রং করে দেখাতে হলে "SAT" পরীক্ষায় ভালো নম্বর দরকার! ১৪৫০-১৫০০+ যদি পেয়ে যাও, অনেক ইউনিভার্সিটি তোমাকে ফুল টিউশন এ অ্যাডমিশন অফার করবে। SAT এর সাথে যদি নিজেকে এক্সট্রা অর্ডিনারি দেখতে পারো, তাহলেই ফুল রাইড! 😉 ইয়ে, মানে... হয়তো! আসলে এদিকে ভাগ্যের ও একটা ব্যাপার আছে, সেই সাথে অ্যাপ্লিকেশন এর অন্যান্য অংশ ও ভালো থাকতে হবে, যেমন: Essay! ভালো একটা essay লিখতে গেলে ভালো ইংলিশের দক্ষতাও প্রয়োজন। So, start EARLY!!!
Should I skip SAT?
SAT করোনার পর থেকে অনেক জায়গাতেই অপশনাল ছিল। কিন্তু যত বছর সামনে গেছে, কলেজ/ইউনিভার্সিটি গুলো তত বেশি SAT কে গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে। তাই একে অবহেলা করলে পস্তাতে হবে! (আমার মত :) Dartmouth College প্রথমবারের মতো SAT কে ম্যান্ডেটরি করেছে ফল ২৫ থেকে! আস্তে আস্তে বড় বড় ইউনিভার্সিটি গুলোও করবে।
Myth 1: আমেরিকাতে স্কলারশিপ পেতে IELTS এ ভালো স্কোর লাগে!
- একদম ভুল! আকাশ থেকে পড়েছ? হাহা, এটা তোমার ইংলিশ দক্ষতার একটা প্রমান মাত্র। এর উপর কোনো স্কলারশিপ নির্ভরশীল না। যদি লক্ষ্য শুধুমাত্র আমেরিকা হয়, তাহলে Duolingo English Test ও দিতে পারো। আমি নিজেই দিয়েছি!
- ৩) রেকমেন্ডেশন লেটার তো স্যার রা লিখে দিবে না! কি করবো?
- বলেছিলাম না, Start EARLY! আগে আগে এইসব মাথায় রেখে তুমি তোমার কলেজের কোনো স্যার এর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে পারো এবং তোমার এই লেটার নিয়ে আগে থেকেই উনার সাথে কথা বলে রাখো, যেনো উনি খুশি হয়েই তোমাকে সাহায্য করে। স্কুলের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর অনেকেরই থাকে না। তাই, কলেজের যেকোনো একজন স্যার কে কাউন্সিলর বানালেই হবে। যদিও অনেকের ক্ষেত্রে কোনো স্যার ই সাহায্য করে না। সেইক্ষেত্রে নিজেই অনেকে নিজের রেকমেন্ডেশন লেটার লিখে ফেলে (ভয়ানক ব্যাপার 😛)
- ৪) পোর্টফোলিও কি জিনিস ভাই?
- তুমি যদি ক্রিয়েটিভ কেউ হও, পোর্টফোলিও তোমার জন্যে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। তোমার ক্রিয়েটিভ কাজ কর্ম গুলো কোথাও স্টোর করে রাখলে সেটাই তোমার পোর্টফোলিও। আমার ক্ষেত্রে আমি নিজের ওয়েবসাইট পেইজ এ প্রদর্শন করেছি নিজের মত করে! ওয়েবসাইট বানাতে না পারলে বিভিন্ন থার্ড পার্টি (প্রফেশনাল) ওয়েবসাইট এ স্টোর করা যায়। চাইলে গুগল ড্রাইভ এর সাহায্য নিয়েও কিংবা PDF আকারেও শেয়ার করতে পারো। আমি আমার ওয়েবসাইটে আমার বিভিন্ন প্রজেক্ট ও অর্জনও শোকেস করেছিলাম!
- ৫) "আমি SAT এ ভালো নম্বর পাই নাই। প্রোফাইল টাও ভালো না, শুধু GPA 5 ই আছে। "
- Be realistic, bro! এমন হলে তো কেউ তোমার পিছনে কোটি টাকা ইনভেস্ট করবে না, তাই না! তোমার ফ্যামিলি যদি প্রতি বছর ৪০-৫০ লাখ টাকা ইউনিভার্সিটি কে দেয়, সেই ক্ষেত্রে low tier কোথাও না কোথাও হয়তো অ্যাডমিশন পেতে পারো। তোমার পর্যাপ্ত টাকা থাকা লাগবে আরকি। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই আমেরিকার এই ব্যায়বহুল এডুকেশন এফোর্ড করতে পারে না।
তোমার EFC যত বেশি তোমার অ্যাডমিশন পাওয়ার চান্স তত বেশি। কারণ তোমার পিছনে কম টাকা ইনভেস্ট করতে হচ্ছে। কিন্তু অ্যাডমিশন পেতে হলে আগে যোগ্য হতে হবে!Part 2: Read my story of being a Diplomat!